শাহেদ মিজান :
মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ও কালারমারছড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ‘জুলুম’ আর ‘হয়রানি’র কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলণের প্রয়োজনে খাজনা পরিশোধ করতে গিয়ে জমি মালিকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে সেখানে। এই নিয়ে শুরু থেকেই ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন ভাবে অভিযোগ করেও আসলেও জেলা প্রশাসন বা উর্ধ্বতন কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জানা গেছে, সম্প্রতি দুদকের অভিযানে মহেশখালী উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো আবদুর রহমান গ্রেফতার হলে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিলো। তখন উর্ধ্বতন প্রশাসনের পক্ষ থেকে হোয়ানক ও কালারমারছড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দ্বৈত তহসিলদার জয়নাল আবেদীনের প্রতি নজরদারি বাড়ানো হয়। তখন গুঞ্জন উঠেছিলো জয়নাল আবেদীনকে মহেশখালী থেকে বদলী করা হবে। কিন্তু তিনি এখনো সেখানে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তবে এখন শুধু কালারমারছড়ার দায়িত্বে রয়েছেন। অন্যদিকে হোয়ানক ইউনিয়ন ভূমি অফিসের গিয়াস উদ্দীন নামে আরেক তহসিলদারকে পদায়ন করা হয়েছে।
কিন্তু ভুক্তভোগীরা বলছেন, ‘যে লাউ সে কদু’। পদায়ন হয়ে নবনিযুক্ত তহসিলদার গিয়াস উদ্দীন আগের মতো খাজনা আদায়ে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। এই নিয়ে নোমান উদ্দীন ইলাহী নামে এক ব্যক্তি গত ২৫ নভেম্বর তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার স্ট্যাটাসটি নিয়ে ফেসবুকে বেশ আলোচনা হচ্ছে। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন- অবশেষে নরক থেকে মুক্তি পেলাম, তবে নরকের সর্দারের আচরণে আমি বড়ই বিস্মিত। আল্লাহ বোধহয় ওনাকে বিবেক, হায়া, কিংবা লাজ-লজ্জ্বা কোনটাই দেননি। আমার সামনে এক বৃদ্ধ লোককে গড়গড় করে বলে দিলেন চাচা আপনাকে ৫০০০ টাকা খাজনা দিতে হবে। কিন্তু আমি খাজনা রশিদে চোখ বুলিয়ে দেখলাম ৪৫০ টাকা লিখা। যখন আমি প্রতিবাদ স্বরূপ জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু ওনি বললেন- এসব নাকি বুঝবো না। পরে আমার বেলায় দেখি একি ঘটনা ঘটল। এভাবেই চলতেছে নতুন স্যারের ঘুষ কার্যক্রম তাও দুপুর ৩ টায় অফিসে এসে। পরিশেষে একটা কথা বলে রাখি, যতবার সরকারি অফিসে গিয়েছি ততবার মনে হয়েছে আমি এদেশের নাগরিক নই।
জানতে চাইলে নোমান উদ্দীন ইলাহী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ৭০ টাকার রশিদে ৪০০ টাকা নেয়া হয়েছে। আমার আগে লাইনে থাকা এক ব্যক্তি থেকে ৪৫০ টাকার রশিদে ৫০০০ টাকা নেয়া হয়। তার কাছে অত টাকা না থাকায় তিনি বাড়ি থেকে এনে টাকাগুলো দেন।’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের কারণে হোয়ানক ও কালারমারছড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের খাজনা আদায়ের ধুম পড়ে। এই সুযোগকে লাগিয়ে জমির মালিকদের জিম্মি করে অবৈধভাবে খাজনার ১০গুণ পর্যন্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন তহসিলদার জয়নাল আবেদীন। কিন্তু রশিদ দেয়া হতো সরকার নির্ধারিত অংকের। এভাবে ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তহসিলদার জয়নাল আবেদীন। প্রকাশ্যে এভাবে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নিলেও উপজেলা প্রশাসন বা জেলা প্রশাসন থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবসায় নেয়া হয়নি। এতে মানুষের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। কিন্তু তারপরও জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় হয়নি। তিনি এখন কালারমারছড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বহাল রয়েছেন।
এদিকে আরো অভিযোগ পাওয়া গেছে, বর্তমানে কালারমারছড়া ও হোয়ানকে দু’জন তহসিলদার নিযুক্ত করা হলেও এখনো সময় মতো অফিসে আসেন না তারা। অফিস সময় পেরিয়ে দুপুরের দিকে তারা অফিসে আসছেন। ঘন্টা তিনেক অফিস করে আবার অফিস ত্যাগ করেন। এতে সহজে খাজনা আদায় সম্পন্ন হচ্ছে না। তবে এটাকে কৌশল মনে করছেন জমির মালিকরা। তাদের দাবি, চাপে ফেলে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কৌশল এটি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযোগে অস্বীকার করেন হোয়ানক ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার গিয়াস উদ্দীন। তিনি বলেন, আমি কোনো রকম অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছি না। কেউ তা প্রমাণ দিতে পারবে না।’
মন্তব্য করুন