হাশেম সৈকত :
উনিশ শত আটানব্বই, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। এক বড় আপাকে কবিতা লিখতে দেখে, আমিও একটি কবিতা লিখে ফেললাম। কবিতার নাম ‘স্বাধীনতা দিবস’। কবিতা টি মেজভাই কে দেখালাম। পড়ে মেজভাই আনন্দিত হলেন। বললেন, মার্জিন করা সাদা কাগজে কবিতাটি লিখে দিতে। মেজ ভাইয়ের সামনে কবিতা লিখছিলাম। মেজভাই দেখল, কবিতার লাইন বাঁকা হচ্ছে। আবার লিখতে বলল, আবার লিখলাম। আবারও বাঁকা। রাগে গালে বসাই দিলেন চড়। চড় খেয়ে, রাগ হজম করে আবার লিখলাম। এইবার লাইন সোজা হল, যাক বাঁচা গেল। আর বললেন কবিতাটি কক্সবাজারে কোন এক পত্রিকায় পাঠিয়ে দিবেন। কিছুদিন পর মেজভাই মাকে ডাকতে ডাকতে অস্থির হয়ে বাড়ি আসলেন। মায়ের হাতে একটি পত্রিকা দিলেন, বললেন এখানে আমার কবিতা ছাপা হয়েছে। আমি পত্রিকা নিয়ে চোখ বুলিয়ে নিলাম। পত্রিকার নাম দৈনিক সৈকত। তৃতীয় পৃষ্ঠায় ‘ঝিনুকমেলা’ আসরে আমার লেখা ছড়া ‘স্বাধীনতা দিবস’ ছাপা হয়েছে। এই প্রথম ছাপা হরফে আমার নাম দেখে, খুশিতে আত্মহারা। এইভাবে লেখা শুরু। ছোটদের সাপ্তাহিক আয়োজন হিসেবে প্রতি সোমবার ঝিনুকমেলা প্রকাশিত হতো। তখন কক্সবাজার থেকে দৈনিক সৈকত ও দৈনিক কক্সবাজার প্রকাশিত হতো। দৈনিক কক্সবাজার বহুল প্রচারিত। দুই পত্রিকায় নিয়মিত লেখা শুরু করলাম।
দৈনিক কক্সবাজারের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘ঝিকিমিকি’ কি বার প্রকাশিত হতো মনে নেই। প্রথম দিকে ঝিকিমিকির বিভাগীয় সম্পাদক ছিলেন কবি আবুল ফারুক খান। কবি অকালে মৃত্যু বরণ করেন। কবির একমাত্র কাব্য ‘আত্মরক্ষণ’। আবুল ফারুক খানের পর ঝিকিমিকির দায়িত্ব নেন আব্দুল কুদ্দুস রানা (দৈনিক প্রথম আলো)। আব্দুল কুদ্দুস রানা যতদিন ঝিকিমিকিতে ছিল, তা ছিল ঝিকিমিকির শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়ে যারা লিখতেন সোলতান আহমদ মনিরী, অপু বড়ুয়া, দর্পন বড়ুয়া, খালেদ শহীদ, আলী প্রয়াস, আমিনুল হক আমীন, সোয়েব সাঈদ, জাহেদ হোসেন জায়েদ, নুপা আলম, হাশেম সৈকত, ইকবাল বাহার চৌধুরী, এম জহিরুল ইসলাম, মঞ্জুর হাসান মিলু, সাইফুল ইসলাম চৌধিরী, শফিউল আলম মাসুদ (মাসুদ শাফি), বেলাল আবেদনী ভুট্টো, সাগর ফরহাদ ইউসুফ, বাবুল মিয়া চৌধুরী, আবুল মনজুর রানা, মনজুর হাসান মিলু, সাফিয়া তাসনিম দ্রাঘিমা, শিরিন মুন্নি, নুরুল আবছার পাশা, আহমদ সোলতান, আহসান সুমন, শাহজাহান শাহীনসহ অনেকে। ঝিকিমিকিতে নুপা আলম ও আমার লেখা নিয়মিত থাকতো।
তৎকালীন দৈনিক আজকের কাগজের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘কাগজ পাঠক ইউনিট’ কাপাই এর অনুকরণ করে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ‘মিলন মেলা’। মিলন মেলার কমিটি হয়েছিল টেকনাফ, হোয়াইক্যং, কোর্টবাজার, মরিচ্যা ইউনিটের। নিয়মিত বৈঠক হতো। একটি সক্রিয় পাঠচক্রে রুপ লাভ করেছিল। ঝিকিমিকি লিখিয়েদের অনুপ্রাণিত করতে আব্দুল কুদ্দুস রানার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘ঝিকিমিকি’ সাময়িকী। প্রচ্ছদ করেছিলেন ম রহমান মুফিজ।
দৈনিক কক্সবাজারে সাহিত্য পাতা ধরে অনেকে প্রতিনিধিত্ব করছে সাহিত্য ও সাংবাদিকতায়। বর্তমানে পূর্বেকার ঝিকিমিকি নেই, নতুন কোন সাহিত্য পাতা পারে, পর্যটন শহর কক্সবাজার থেকে আরেকটি লেখক গোষ্ঠী তৈরী করতে।
লেখক : প্রভাষক, বাংলা, থানচি কলেজ।
মন্তব্য করুন