।।জাবেদ চৌধুরী।।
আমাদের আনন্দ। Ananda Prasad Roy
আহ! কত ভাল, চঞ্চল একটা ছেলে, নাই হয়ে গেল। কষ্ট, ভীষন কষ্ট।
২০১০ সাল। আমি তখন ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতির দায়িত্বে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘোষনা করেছে। তখন চমেকে দীর্ঘদিন পর আমাদের মোটামুটি একটা ভাল অবস্থান তৈরী হয়েছে।
মেডিকেল কলেজ কমিটি নির্বাচন নিয়ে দোলাচলে ছিল। নির্বাচনে প্রার্থী দিবে কি দিবে না, দিলে একাডেমিক নানান সমস্যায় পড়তে হবে প্রার্থীদের। জেলা থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হল নির্বাচনে অবশ্যই প্রার্থী দিতে হবে এবং পুর্নাঙ্গ প্যানেল দিতে হবে। পুর্নাঙ্গ প্যানেল তৈরী করা হল। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল পুর্ণাঙ্গ প্যানেল দেওয়া হলেও আামরা ভিপি জিএস নয় অন্য যেকোন একটা পোস্ট নির্ধারন করে সেখানে সবচেয়ে সম্ভবনাময় প্রার্থীকে দিব। এবং সেই প্রার্থীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনি প্রচারনা চালানো হবে। এবং ওই পোস্টে বিজয় অর্জন করে সংসদে ঢুকতে হবে। কে সেই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী? বেশি চিন্তা করতে হয়নি, নিজের ব্যাচ এবং নিজের ডিপার্টমেন্টে ছাত্র ছাত্রীদের কাছে কে বেশী জনপ্রিয়? কার সবচেয়ে বেশি বন্ধু? অন্য ব্যাচের মধ্যেও কার সবচেয়ে বেশি পরিচিতি এবং গ্রহনযোগ্যতা? এসব প্রশ্নের তৎক্ষনাত উত্তর ছিল একটি নাম আনন্দ প্রসাদ রায়। জানি মেডিকেলের ছাত্রদের পড়ালেখার চাপ খুব বেশি। সময় পায় না ওরা। আমি নিজে টানা সময় দিয়ে ওদের জন্য পোস্টার, লিফলেট তৈরী করেছি। সাহায্য নিয়েছি চমেকের তৎকালিন ছাত্রনেতা ডাঃ রেজওয়ান রশিদ জনি আর ডাঃ শুভেন্দু শুভর। একটা ইশতেহারও তৈরী করেছিলাম চার পাতার। সেটা বুকলেট আকারে ছাপিয়েছিলাম। আমাদের কাঙ্খিত প্রার্থী আনন্দর জন্য আলাদা করে লিফলেট ছাপিয়েছিলাম। ওর জন্য পোস্ট নির্ধারণ করেছিলাম আন্ত: ক্রীড়া সম্পাদক। বিপক্ষ প্যানেল আ জ ম নাছির সমর্থিত ছাত্রলীগ প্যানেল। ওরা প্রতিদিন প্রতিটি ভোটারের রুমে রুমে বিরিয়ানির প্যাকেট বিতরণ করেছে। আর আমাদের প্রাথীরা ক্লাসে ক্লাসে রুমে রুমে গিয়ে লিফলেট বিতরন করেছে। প্রচারনায় আমরাও কোন অংশে কম ছিলাম না। একদিন তো শুনেছি এক ডাক্তার অধ্যাপক ক্লাসে ছাত্র ইউনিয়ের লিফলেট আর ইশতেহারের বুকলেট নিয়ে হবু ডাক্তারদের দেখিয়ে বলেছিল দেখো কত সুন্দর প্রচারনা করছে ওরা। বিপক্ষ প্যানেল আমাদের লক্ষ্য বুঝে গিয়েছিল। হামলা করল আনন্দর উপর। ভয় দেখালো, আনন্দ রাগে ক্ষোভে বলেছিল পাল্টা কিছু করতে, পাল্টা কি করব, আমাদের তো সেই সামর্থ নেই। অসহায় সভাপতি ওকে বুঝানোর নিরলস চেষ্টা করেছি, অভিমানি ছেলে হতাশ হয়ে পড়লো। নির্বাচন হলো দেখা গেল আমরা সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছি ভিপি পদে, ২১১ ভোট পেয়েছিল। ভোটার ছিল ৯০০ জন। আনন্দকে ওরা ভয় পেয়েছিল। এমন ভয় পেয়েছিল যে ও সবচেয়ে ভাল ছাত্র ছিল এবং ভাল পরীক্ষা দিলেও ওকে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেটা নিয়ে সে আরেক দফা ভেঙ্গে পড়েছিল। একবছর পিছিয়ে পড়েছিল। দেখা হলেই ক্ষোভ ঝাড়ত। তবু ওর চোখে স্বপ্ন ছিল। প্রায়ই দেখা হত রাস্তায়। চেম্বারে যেতে বলতো। দাঁতের বিভিন্ন জিন্জিবাইটিসের ট্রিটমেন্ট করে দিবে বলতো।
এতলেখা কখনো ফেসবুকে লিখিনি, এত হকচকিয়ে গেছি, মেনে নিতে পারছি না। এরকম প্রাণবন্ত ছেলেটা আর কখনো হেসে বলবেনা কেমন আছো, তোমার দাঁতে জিন্জিবাইটিস, চেম্বারে আইসো।
লেখক: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম জেলা।
মন্তব্য করুন