।।জাতীয় ডেস্ক।।
একাদশ সংসদের নতুন সরকার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নতুন করে কৌশলী পরিকল্পনা করছে। নতুন কৌশল অনুযায়ী, সংকট সমাধানে মিয়ানমার এবং বিশ্বের প্রতি এবার চাপ দেবে ঢাকা। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি চাপ বাড়ানো, সংকটের ভার বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্ববাসীকে শেয়ার করা এবং রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন দায়িত্ব নেয়ার পরপরই এই ইস্যুতে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘রোহিঙ্গা একটি সিরিয়াস ইস্যু। এটি অগ্রাধিকারমূলক একটি বিষয়। এই বিষয়ে অনেক আলাপ করতে হবে, আলাপ করে সমাধানে পৌছতে হবে। এই সমস্যা সহজেই সমাধান হবে না। মিয়ানমার বাংলাদেশের বন্ধু দেশ। তারা যদি বন্ধুত্বের প্রতিফলন দেয় তবে এই সমস্যা সহজেই মিটে যাবে।’
ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গা সংকটের ধকল পোহাচ্ছে বাংলাদেশ। এই সময়ের মধ্যে মিয়ানমার কখনোই বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করেনি। মিয়ানমার বন্ধুসুলভ আচরণ করলে অনেক আগেই এই সংকট মিটে যেত।
এই ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক আচরণ পাওয়া যাবে না, বিষয়টি বিগত কয়েক দশকের অভিজ্ঞতায় নিশ্চিত হয়েছে ঢাকা। তাই এই সংকটের সমাধানে এবার ভিন্ন কৌশল নেয়া হচ্ছে। যাতে মিয়ানমার চাপে পরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি এই সংকটে বিশ্বের যে দায়িত্ব রয়েছে, সে বিষয়েও সকলকে সজাগ করবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, নতুন মন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। রোহিঙ্গা সংকটের ফলে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং সারা বিশ্বে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কী ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে তা বের করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়েরও দায়িত্ব রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট জিইয়ে থাকলে ভারত, থাইল্যান্ড, গণচীনসহ বিশ্বের স্বার্থ বিঘ্নিত হবে, সবার জন্য অমঙ্গল হবে। সকলের স্থিতিশীলতার জন্যই রোহিঙ্গা সংকট একটি হুমকি।’
এ ছাড়া, সংকট সমাধানে বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে স্থানান্তরের জন্য জাতিসংঘকে পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে এতো রোহিঙ্গা না রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থানান্তর করা যায়। সমস্যা দূর হলে তারা মিয়ানমারে ফেরত যাবে। এ ছাড়া ঢাকা কফি আনান কমিশনের পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে জাতিসংঘকে মিয়ানমারের প্রতি চাপ দিতে বলেছি।’
ড. এ কে আব্দুল মোমেন আরও বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব এই সমস্যা সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বড় আকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, জাতিসংঘের মহাসচিবের সভাপতিত্বে বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করার প্রস্তাব দিয়েছি। এই সমস্যা সমাধানে বিশ্ববাসী কীভাবে কী শেয়ার করতে পারে, কোন দেশ কতজন নিতে পারবে তা আলোচনা করা প্রয়োজন।’
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার বিশেষ দূত ইয়াং হি লি রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকা সফর শেষে ফিরে যাওয়ার সময় (২৫ জানুয়ারি) জানান, সংকট সমাধানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অন্য দেশে স্থানান্তরের পরিকল্পনা কোনো সমাধান নয়। বরং এই ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে হবে এবং রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার নিশ্চিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অপরাধ আদালত গঠন করা যেতে পারে।
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আজজীল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান প্রকৃত অর্থে মিয়ানমারের হাতে। অথচ মিয়ানমার কিছুই করছে না। এজন্য মিয়ানমারকে চাপ দিতে হবে। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নিতে আরও কৌশলী হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সহায়তা নিতে হবে। আইসিসি যাতে রাখাইন হত্যার বিচার করতে পারে এজন্য জাতিসংঘকে শক্তিশালী উদ্যোগ নিতে হবে। জাতিসংঘে চীন এবং রাশিয়া যাতে বাংলাদেশের পক্ষে থাকে এ জন্য কৌশলী কূটনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন। এই ইস্যুতে বেইজিং এবং মস্কো যাতে ঢাকার পক্ষে থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে কূটনৈতিক তৎপরতায় নামতে হবে।
মন্তব্য করুন