।।অাশিকুর রহমান অপু।।
২০১৭ সালে যখন রোহিঙ্গা ঢলের শুরু তখন এদেশে কিছু মানুষ এর মধ্যে মুসলিম ভাই বলে এক ধরনের জোশ চলে আসে। তাঁরা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক হবার আহ্বান জানান। ঠিক নির্বাচনের এক বছর আগে সরকারের কর্তাদেরও মনে হয়েছিল রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেওয়া উচিত। সেটা যেমন ১৯৭১ সালে আমাদের ১ কোটি লোকের ভারতে আশ্রয় নেবার দায় মনে রেখে; তেমনি স্বাভাবিক মানবিকতার জন্য; তেমনি মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধে জেগে ওঠা ভোট ব্যাংককে কাছে টানার জন্যও হতে পারে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে অন্য ডাইমেনশনে চলে আসে। পুরো পৃথিবীর বড় বড় নেতাদের কাছে বাংলাদেশের মহত্ব হয়ে যায় টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড! এতে বুকের ছাতি আরও বেড়ে যায় বাংলাদেশের। এদেশের সাধারণ মানুষ, কক্সবাজারের বাসিন্দারা, সরকার প্রশাসন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে এই ১ মিলিয়ন মানুষকে পালার সাহাস দেখায়।
পৃথিবীতে অনেক লোক যেমন দুধ বেঁচে, তেমনি অনেক লোক মদ বেঁচে। অনেক লোক জুতা সেলাই করে। অনেক কোম্পানি কম্পিউটার পার্টস বানায়। অনেক এনজিও স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করে। তেমনি অনেক সংস্থা শরনার্থী নিয়ে কাজ করে। এটাই তাদের কাজ, আয়ের উৎস এবং লক্ষ্য। যেখানেই শরনার্থী সেখানেই তারা ছুটে যায়। মামলা শক্ত হইলে যেমন থানা-পুলিশ খুশি হয়, ঘটনা বড় হইলে যেমন সাংবাদিকরা জোশে থাকেন; তেমনি শরনার্থী বেশি হলে সেটাকে ইতিবাচক মন থেকেই দেখে শরনার্থী নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো। ২০১৭ তে এরকম বড় বড় সংস্থাগুলো বড় কলেবরে ছুটে আসে কক্সবাজারে। তাদেঁর কাজ শুরু করে সানন্দে। রোহিঙ্গাদের জন্য ফান্ড যতনদিন থাকবে, তাঁদের কাজও থাকবে। এই রোহিঙ্গারা ফেরত চলে গিয়ে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অন্য কোথাও শরানার্থী খুঁজতে হবে। না পেলে অনেকের চাকরি থাকবে না। কারণ খরচ যোগানোর তহবিল থাকবে না। রোহিঙ্গাদের জন্য যা তহবিল যোগাড় হয়, তাঁর একটা বিশাল অংশ এই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর লোকদের বেতন-ভাতা, থাকা-খাওয়া এবং যাতায়াতে ব্যয় হয়। ফলে আমি আপনি যতটা চাইবো এই রোহিঙ্গারা চলে যাক, ততটা কি এই সংস্থাগুলো চাইবে?
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে গেলে তাদেঁর প্রত্যেকের জন্য ৬ হাজার ডলার (প্রায় ৫ লাখ টাকা) করে দেবে চীন, এমনটা ঘোষণা এসেছে। সেখানে তাঁদের বাড়ি ঘর তৈরি করে দেওয়া, জীবন মান ঠিক করে দেবার জন্য চীন-জাপান-ভারত আগেই ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এর পরেও রোহিঙ্গারা যেতে রাজি না। এর পেছনে কারণ হিসেবে তাঁরা বলছে নিরাপত্তা সংকট!
নিরাপত্তার কথা অমূলক না। কিন্তু এই রোহিঙ্গাদের ফেরত যাবার কোনো তাগিদ কি দেখছেন? কোনো চেষ্টা? বাংলাদেশ যে চেষ্টা করছে, তাঁর সামান্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কি?
বরং আমরা দেখছি উল্টা, যারা সাহায্য দিচ্ছে সেই বিদেশিদের ওপর নির্মম আক্রমন। স্থানীয়দের ওপর আক্রমন। চিকিৎসকের ওপর আক্রমন। রোহিঙ্গারা অনেকটাই প্রকাশ্যে বলে, বাংলাদেশ আমাদের জন্য কি করছে, সব করছে ইউনেইচ্চার (UNHCR কে এভাবেই বলে তাঁরা)। এই রোহিঙ্গারা যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তাঁর নমুনা কিছুদিনের মধ্যে বেশ ক’টি ঘটনায় দেখা গেছে।
২০১৮ এর নভেম্বরে যখন মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের কিছু পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে সম্মত হল, তখণ এই রোহিঙ্গারা রাস্তায় নেমে বলল, তাঁরা যাবেনা। তাঁরা মিছিল করল, RRR এর প্রধানকে রাস্তায় অবরুদ্ধ করল। তালিকাভুক্তরা বাসা ছেড়ে চলে গেল। অথচ তখন মিয়নামারের ওপর আন্তর্জাতিক চোখ, ওপারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের থাকা-পড়ার দায়িত্বে UNHCR, UNDP এবং আন্তজর্তিক রেড ক্রস, মিয়ানমার সেচ্ছায় নিচ্ছে এত চোখ সাক্ষী রেখে। কিন্তু রোহিঙ্গারা যেতে রাজি না। তাঁরা বাংলাদেশে ভাল আছে মনে করছে।
আমার ধারণা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পাঠাতে গেলে আরেকদফা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হতে পারে। আর ভাসানচর ভালনা, হেন তেন বলার জন্য দেশি কিছু গণমাধ্যম এবং বিদেশি বেশ কিছু সংস্থা তো আছেই। এই ঘটনা নিয়ে সহিংসতা তৈরি হলেও অবাক হবো না।
আমার ধারণা এই রোহিঙ্গারা আর কিছুদিন পর সূচির দেশের জেনারেলদের মতো বলা শুরু করবে কক্সবাজার তাঁদের জায়গা।
সেন্টমার্টিনকে যেমন এখন মাঝেমধ্যেই নিজেদের বিভিন্ন ম্যাপে দেখানো শুরু করেছে মিয়ানমার, তেমনি একসময় কক্সবাজারকও ভুল করে দেখিয়ে ফেলবে হঠাৎ। কোনো একদিন যদি সেন্টমার্টিন বা কক্সবাজারের দখল নিয়ে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার মুখোমুখি হয় এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে না, এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যায়।
মন্তব্য করুন