ডিবিডিনিউজ ডেস্ক :
লড়াই-সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন নেতারা ঘুণেধরা সমাজ পরিবর্তনে দীপ্ত পথচলা অঙ্গীকার করেছে। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করেছে সংগঠনটি।
শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা রাসেল ইসলাম সুজন জানান, যুব আন্দোলন, নতুন কাজের ধারা, মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় অসীম তারুণ্য নিয়ে ১৯৭৬ সালের ২৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন। গোপীবাগে সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের বাসার ছাদে মাত্র ছাত্র আন্দোলন শেষ করা ১৫-২০ জন যুবক, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, তাদের প্রাথমিক প্রচেষ্টায় তৎকালীন গুমোট পরিবেশ সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে যে সংগঠন গড়ে উঠেছিল, তার নাম ‘গণতান্ত্রিক যুব ইউনিয়ন’। ফলশ্রুতিতে এ অঞ্চলে যুবকদের প্রকৃত আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে যুব সমাজের ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্রাজ্যবাদ-ফ্যাঁসিবাদবিরোধী ও শূন্যপদে নিয়োগদানে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। ১৯৭৭ সালের ৯-১০ জানুয়ারি প্রথম সম্মেলনে সংগঠনের নাম হয় ‘বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন’।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিন বুধবার সকাল ৮টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সংগঠনের ঢাকা মহানগরের সভাপতি হাবীব ইমন ও সাধারণ সম্পাদক রাসেল ইসলাম সুজনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল গণআন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন।
এরপর শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম। উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য তছলিম সাখাওয়াত, শিশির চক্রবর্তী, ত্রিদিব সাহা, সহ সাধারণ সম্পাদক শরীফ-উল আনোয়ার সজ্জন, কোষাধ্যক্ষ শিমুল খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ম. ইব্রাহিম, কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি হাবীব ইমন, সাধারণ সম্পাদক রাসেল ইসলাম সুজন, সহ সাধারণ সম্পাদক শাখারভ হোসেন সেবক, আজিমউদ্দিন, তত্ত্ব-গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক এম মামুন কবীর, সদস্য কামরুল হাসান প্রমুখ।
তিনি জানান, দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বিকাল ৪টায় রাজধানীর মণি সিংহ সড়ক থেকে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি ডেঙ্গু নির্মূলসহ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের দাবিতে ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন সম্বলিত ফেস্টুনসহ লাল তারার নীল পতাকায় সজ্জিত ছিল। পরে পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে কবিতা-গান, শুভেচ্ছা বিনিময় আর স্মৃতিচারণে মধ্যে পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এসব আয়োজনে শামিল হন তারা, যারা যুব ইউনিয়নের দর্শনকে চর্চা করেছেন যুগ যুগ ধরে। উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠাকাল থেকে জড়িত প্রবীণ থেকে বর্তমান সময়ের তরুণরাও। এখানে উঠে এসেছে ৪৩ বছরের নানা প্রতিবন্ধকতা, নানা সংগ্রাম-লড়াই, বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পথচলার কথা। এ পথচলায় একদিকে যেমন গণমানুষের পাশে থেকে যুব সমাজের পথ নির্মাণ ও নির্দেশ করেছে, অন্যদিকে মানুষের জীবনবোধ ও অধিকার আদায়ের রাজনৈতিক সংগ্রামেও নেতৃত্ব দিয়েছে। দেশের প্রতিটি দূর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের জন্য সহযোগিতার অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছে যুব ইউনিয়ন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংগ্রাম এবং সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদবিরোধী ও দেশে দেশে মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে যুব ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জানান, ফ্যাঁসিবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ সোমেন চন্দ, চট্টগ্রাম বিদ্রোহের শহীদ, নৃশংসভাবে নিহত হওয়া রাঙ্গামাটি জেলার সভাপতি শহীদ আবদুর রশিদ, নব্বইয়ের গণআন্দোলনে শহীদ কমরেড তাজুল ইসলাম, নূর হোসেন, আমিনুল হুদা টিটোকে। স্মরণ করা হয় যিনি গত প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে ছিলেন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সেই সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মাইনুদ্দিন আহমেদ জালালকে।
শুক্রবার বিকালে মৈত্রী মিলনায়তনে আলোচনা সভার শুরুতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যরা। পরে সংগঠনের সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে যুব ইউনিয়নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি হাবীব ইমন।
বক্তব্য দেন সিপিবির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, যুব ইউনিয়নের সাবেক নেতা অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কামরুজ্জামান ননী, তারিক হোসেন মিঠুল, সাবেক কোষাধ্যক্ষ গৌরঙ্গ মল্লিক, ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি অ্যাড. সোহেল আহমেদ, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল, যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য শিশির চক্রবর্তী, সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল ইসলাম জুয়েল, ঢাকা জেলা সভাপতি সিয়াম সারোয়ার জামিল, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকুনুজ্জামান রোকন, বাংলাদেশ যুব আন্দোলনের সভাপতি মুশাহিদ আহম্মেদ প্রমুখ। বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরো জানান, শুধু আনন্দ -সম্মিলন হয়নি, বরং এ সময়ে যুবকদের লড়াইয়ে অংশ নিতে সংগঠিত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। যুবকদের এই পুনর্মিলনী আড্ডায় উঠে এসেছে সম-সাময়িক আন্দোলনগুলোর কথা, উঠে এসেছে অতীতে যুবকদের বিভিন্ন অবদানের কথা, এসেছে সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ে তাদের ভূমিকা রাখার কথা, অন্ধ দলদাসত্ব-প্রদর্শনবাদিতার বিপরীতে মানুষের জন্য লড়াইয়ে প্রগতিমুখী যুবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ করার কথা। সাম্যের স্বপ্নতাড়িত চোখে বাস্তবকে গলিয়ে নতুন ভবিষ্যতের ছাঁচ গড়বার দায়িত্ব নেবে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন- এই কথাটিই বারবার উচ্চারিত হয়।
মন্তব্য করুন