।।জিসেন বড়ুয়া।।
ছেলেটির নাম মোহাম্মদ শাকিব, সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। বয়স ১৩ বছর মাত্র। রামু রাংকুট গ্রামস্থ ঘোনারপাড়া গ্রামে তার বসতি। বাবা ওসমান গণি তার জন্মের পরপরই মারা গেছেন। বছর খানেক অাগে তার বড় ভাই মিঠাছড়ি চা বাগানে হাইওয়ে সড়কে রোড এক্সিডেন্ট হয়ে মারা গেছে। মা হোসনে অারা বেগম অসুস্থ, হাই প্রেসার লেগেই থাকে। ইতিমধ্যে উপর্যপরি দুবার স্ট্রোক করেছে। অার একবার স্ট্রোক হলেই নিশ্চিত মারা যাবে। এই মৃত্যুর নিশ্চয়তা বুকে ধারণ করে অার সংসারের অভাবের তাড়নায় তদুপরি বাবা ও বড় ভাই হারা ছেলেটির ভবিষ্যত অনিশ্চিত অনুভব করে মা প্রায় সময় কেঁদে কেঁদে থাকেন।
ভবিষ্যৎ নিজের অবর্তমানে স্বামী হারা সন্তানের প্রতিষ্ঠার জন্যে অাজ ২০.৬.২০১৯ বৃহস্পতিবার সকালবেলা রামু ঐতিহাসিক রাংকুট বনাশ্রম পুণ্যতীর্থের প্রধান পরিচালক পরম কল্যাণমিত্র অাচারিয় কে. শ্রী জ্যোতিসেন থেরোর হাতে পুত্র মোহাম্মদ শাকিবকে তোলে দিয়ে মা হোসনে অারা বেগম বলেন- ভান্তে, অামি অামার এলাকার হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধ সকল প্রতিবেশীর কাছ থেকে শুনেছি অাপনি অনেক দয়ালু এবং পরোপকারী। অার অাপনার কাছে নাকি বৌদ্ধ মুসলিম কোন পার্থক্য নেই। তাই বুকভরা অাশা নিয়ে অাপনার কাছে ছুটে অাসলাম অামার অসহায় ছেলেটি অাপনার হাতে তোলে দিতে। অাপনিই তাকে অাপনার নিজের পুত্রের মত করে মানুষ করবেন। অামার স্বামী ও বড় পুত্র দুজনেই মারা গেছে। অতীব কষ্ট ও মিন্নত করে সংসার চালায়। এই ছেলেটির লেখাপড়ার খরচ চালানোর সামার্থ্য অামার নেই।
হতভাগা মায়ের এই করুণ হৃদয় বিদারক কথা শুনে শ্রদ্ধেয় ভান্তে ছেলেটিকে গ্রহণ করলেন এবং মাকে কথা দিলেন নিজের কাছে থাকা প্রায় ৩০ জন চাকমা, মারমা, বড়ুয়া, হিন্দুদের অসহায় ছেলেদেরকে যেভাবে সহায়তা করে যাচ্ছি ঠিক সেই ভাবে অাপনার ছেলেটিকেও মানুষ করার জন্য তার সারা জীবনের দায়িত্ব নিলাম। অার এই অাসন্ন অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষার ফি, মাসিক স্কুল বেতন, প্রাইভেট ও খাতা কলমের ব্যবস্থা করে দিলেন। এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব নিলেন। এতে অসহায় মা হোসনে অারা বেগম অাবেগঘন অানন্দে চোখের পানি ছাড়লেন।
অামরা এমনতরো মানবতা প্রেমি অসম্প্রদায়িক বৌদ্ধ ভিক্ষু অাচারিয় কে. শ্রী জ্যোতিসেন থেরোর প্রতি অশেষ পুণ্যদান করতেছি তাঁর শতায়ু নীরোগ ও অধিকতর সফল জীবন লাভের জন্য
মন্তব্য করুন