রফিক উদ্দিন আজাদ :
“বাবর আলী” দেশ-বিদেশের ট্রাভেলার ও পাহাড় পছন্দ করা মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভিনদেশী ট্রাভেলার ও মাউন্টেনিয়ারদের প্রিয় এক জন মানুষ চট্টগ্রামের ছেলে বাবর আলী। হাটহাজারী উপজেলার মধ্যম বুড়িশ্বর গ্রামে জন্ম ও বেড়ে উঠা। পিতা মোঃ লেয়াকত আলী কুয়েতে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে দেশে অবসর যাপন করছেন। মাতা লুৎফুন্নাহার একজন গৃহিণী। বড় ভাই ব্যারিস্টার মামুন আলী কর্মরত আছেন টেলিকম কোম্পানী রবির লিগ্যাল এডভাইজর হিসেবে। ছোট ভাই আবীর আলী পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। একমাত্র বোন হামীমুন তানজীন কুমিল্লায় সহকারী জজ হিসেবে কর্মরত। মেধাবী ভাই বোনের মধ্যে বাবর আলী ও পেশায় একজন ডাক্তার, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করে ডাক্তারি পেশা শুরু করেন। বাণিজ্যিকভাবে কায়াকিং শুরু করা কাপ্তাই কায়াক ক্লাবের ৩ উদ্যোক্তার একজন বাবর আলী। পাশাপাশি ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি। এসএসসির গন্ডি পেরুতে পড়েছেন সৃজনী গ্রামার স্কুল আর সরকারী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে। এইচ এস সি পাশ করেছেন ইস্পাহানী কলেজ থেকে। মেধাবী, ডানপিটে ও ভ্রমণ পিপাসু বাবর কে ছোট বেলা থেকেই টানত পাহাড়। ছুটি পেলই একা বা বন্ধুদের নিয়ে পাহাড় জয়ের নেশায় ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তেন, সেই কলেজ জীবন থেকে। বাবর আলির সাথে কথা বলে জানা গেল তার অনেক দিনের লালন করা স্বপ্ন পায়ে হেঁটে দেশের ৬৪ জেলা ঘুরে দেখা। জীবনের ৬ মাস একটানা নিজের মত করে কাটাবেন এই চিন্তা থেকে বিগত দু’মাস হিমালয়ে ছিলেন, হিমালয় ও তার চারপাশ ঘুরে দেশে ফিরে তার দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন পূরনে ৬৪ জেলা পায়ে হেঁটে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন ২৩ অক্টোবর বিকেলে। ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী পঞ্চগড় পৌছে তারপর রুট প্লান ধরে হাঁটা শুরু করবেন। রুট প্লান অনুযায়ী দেশের ৬৪ জেলা সদর বা উপজেলা সদরে রাত্রি যাপন করবেন, সারাদিন হাঁটবেন। পুরা দেশ পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে বাবর আলীর সময় লাগবে ৭৫ থেকে ৮০ দিন। পাহাড় ও ভ্রমণ বিষয়ে বাবর আলীর সাথে অনেক কথা হয়। পাহাড় বিষয়ে সে যেমন অনেক জানেন, তেমনি জানার আগ্রহ ও প্রবল। তার ভাষায়, “পাহাড় নিয়ে আমার আগ্রহের শুরু মূলত ছোটবেলায় সমরেশ মজুমদারের গর্ভধারিণী পড়ে। সমরেশের লেখনীতে জয়িতাদের সাথে আমিও হারিয়ে গিয়েছি লাম ভারত-নেপাল সীমান্তের সেই সুবিশাল পাহাড়ের রাজ্যে। মানসপটে হিমালয়ের সেইসব পাহাড়ের ছবি আঁকতে আঁকতেই দেশের পাহাড়ে যাওয়া শুরু করি ২০১০ সাল থেকে। বান্দরবানের পাহাড় দিয়েই শুরু। ২০১৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু হিমালয়ের বিভিন্ন পর্বতে। সাফল্য আসতে থাকে প্রথম বছর থেকেই। এই বছরও তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত অভিযানে গিয়েছি। সাফল্যের সাথে শেষ করেছি ঐ অভিযানগুলো। পাহাড়ের সাথে সাথে আগ্রহ আছে অন্যান্য এডভেঞ্চার এক্টিভিটিতেও। ক্লাইম্বিং, সাইকেল চালানো, কায়াকিং ইত্যাদিও চলছে সমানতালে। ২০১৭ সালে বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স সফলতার সাথে শেষ করেছি ভারতের উত্তরকাশীর স্বনামধন্য নেহরু ইন্সটিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং থেকে। ভারতের বিভিন্ন রক ক্লাইম্বিং কোর্সে প্রশিক্ষক এবং প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে নিয়মিত অংশগ্রহণ করি আমি। সাইকেলে ক্রস কান্ট্রি রাইড সম্পন্ন করেছি দুইবার। ২০১৬ সালে আখাউড়া-মুজিবনগর এবং ২০১৭ সালে টেকনাফ-তেঁতুলিয়া। কায়াক নিয়ে বেশ কিছু এক্সপিডিশনও করার সুযোগ হয়েছে। তন্মধ্যে কাপ্তাই-বিলাইছড়ি, কাপ্তাই-রাঙ্গামাটি উল্লেখ্যোগ্য।” ৬৪ জেলা পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করে পরবর্তীতে টানা ২০ মাস কাজ করেন কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে। টানা কাজ করতে গিয়ে অনুভব করেন একটা ব্রেক প্রয়োজন, সে চিন্তা থেকেই ৬ মাসের একটি পরিকল্পনা করেন, প্রথমে দু মাস হিমালয়ে কাটান, দেশে ফিরে ৮০ দিনের টার্গেট নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ৬৪ জেলা ভ্রমণে। এ পদযাত্রায় ৬৪ জেলা ঘুরে দেখার পাশাপাশি Single Use Plastic এর ব্যবহার কমানোর জন্য সচেতনতা বাড়াতে প্রচারনামূলক কাজ করবেন। তিনি বলেন বর্তমানে অনেকক্ষেত্রেই আমরা Single Use Plastic এর উপরে নির্ভরশীল। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন টাইপের স্ট্র, প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম প্লেট, প্লাস্টিকের চা/কফির কাপ, কফির কাপের ঢাকনা, পানি/কোল্ড ড্রিংকসের বোতল ইত্যাদি। যেহেতু প্লাস্টিকের তৈরি এসব জিনিসই নন-বায়োডিগ্রেডেবল, সেহেতু এগুলো পরিবেশে থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর। দুনিয়া জুড়ে যত প্লাস্টিকের তৈরি প্রোডাক্ট আছে তার মাত্র ১০-১২ ভাগ রিসাইকেল করা যায়। Single Use Plastic এর ক্ষেত্রে একবার ব্যবহারের পরই এদের জায়গা হচ্ছে ময়লা ফেলার ভাগাড়ে কিংবা জলপথ, নদী ইত্যাদি ধরে সাগরে। সাগরের প্রাণীরা প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র অংশগুলো গ্রহণ করলে সেটা পরবর্তীতে জায়গা করে নিচ্ছে মানুষের খাদ্য শৃঙ্খলে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রে মাছের মোট ওজনের চেয়ে প্লাস্টিকের দ্রব্যাদির মোট ওজন বেশি হবে।” তাই তিনি এ বিষয়ে দেশের জনগন কে তার এ পদযাত্রর মাধ্যমে সচেতন করতে চাচ্ছেন। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন যেন আল্লাহ্ তার স্বাস্থ্য ভাল রাখেন এবং সাফল্যের সাথে পদযাত্রা শেষ করতে পারেন।
মন্তব্য করুন