।।মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন।।
সদ্য সমাপ্ত উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে জনাব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম অপরাপর প্রার্থীদের পেছনে ফেলে বিজয়ী হয়েছেন। ইতিমধ্যে বিজয়ী সবার নামে সরকারীভাবে গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর সবার শপথ গ্রহণও সম্পন্ন হয়েছে। বিপত্তিটা বাঁধে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের আগের দিন বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক একটি আদেশ জারি হওয়ার পর। সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা যায়, জনৈক পরাজিত প্রার্থীর দায়ের করা মামলায় বিজয়ী প্রার্থী জনাব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের আনুষ্ঠানিক দায়িত্বগ্রহণের উপর বিজ্ঞ আদালত সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ফলে নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারলেও নির্বাচিত পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দায়িত্বগ্রহণ করতে পারেননি। যেটা অনাকাঙ্খিত এবং দুঃখজনক। বিজ্ঞ আদালতের আদেশের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং আস্থা রয়েছে। যেহেতু গেজেট প্রকাশ এবং শপথ গ্রহণ দুটোই সম্পন্ন হয়েছে, তাই আমাদের বিশ্বাস, জনাব জাহাঙ্গীর অচিরেই তাঁর দায়িত্বগ্রহণের বিরুদ্ধে জারীকৃত আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন এবং দায়িত্বভার গ্রহণ করতে পারবেন। কারন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন হওয়া এই দুই প্রক্রিয়ার পর আদৌ তাঁর দায়িত্বগ্রহণ ঠেকানো সম্ভব হবে কিনা সেটা বিবেচনায় না রাখাটা নিতান্তই বোকামী। সেই সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো সময়-ই বলে দেবে। কিন্তু আমরা যারা সাধারন নাগরিক তাদের প্রত্যাশা একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা পরিষদ। কারন, কাঙ্খিত সার্বিক উন্নয়নের জন্য উপজেলা পরিষদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেলের কোন বিকল্প নেই।
এখানে একটি বিষয় বলা বাহুল্য যে, জনাব জাহাঙ্গীর যদি আইনী মোকাবেলার মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন অথবা না পারেন তাহলে উখিয়ার জনগনের লাভ ক্ষতি কি? যদি পারেন, তাহলে ক্ষতির চেয়ে আমাদের লাভের পরিমানটা একটু বেশি-ই বৈকি।
কারন, তিনি বর্তমান কেবিনেট সচিব জনাব শফিউল আলমের আপন ভাতিজা। সেই সুবাধে চেষ্টা করলে উখিয়ার উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট বরাদ্ধও আদায় করে নিতে পারবেন এবং উন্নয়নে বড়সড় ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আমাদের ধারনা। আর যদি দায়িত্বগ্রহণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয় কিংবা না পারেন তাহলে হয়তো তাঁর ব্যক্তিগত ইমেজের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে, আর কিছুটা হয়তো আর্থিক। তাই বৃহত্তর স্বার্থে তাঁর দায়িত্বগ্রহণের ক্ষেত্রে নতুন কোন ঝামেলা না করাই শ্রেয়। কথাটা এই জন্যই যে, আমরা গেল উপজেলা পরিষদকেও পূর্ণাঙ্গ সময়ের জন্য পাইনি। মামলার বেড়াজালে আমাদের উন্নয়নকে দারুনভাবে বাঁধাগ্রস্ত করা হয়েছিল। তাই সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটুক তা আমরা চাইনা। যেভাবেই হউক, বিজয়ের শেষটাও কিন্তু অনেকসময় বিজয় দিয়েই দিয়েই শেষ হয়। ইতিহাস মতে, মামলা করে এমন বিজয়কে কেউ কখনো স্থায়ী রুপ দিতে পেরেছে বলে মনে হয়না। তাই আমার বিশ্বাস, অচিরেই জনাব জাহাঙ্গীর তাঁর আসন অলংকৃত করতে পারবেন। সরকারী গেজেট এবং বিজয়ীর শপথ গ্রহণকে সবার সম্মান জানানো উচিত।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেকারনে জনাব জাহাঙ্গীরকে ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, ঠিক একই কারনে আইনটা আরো অনেকের উপর কার্যকর করা যেত। সেটা না করে কেবল একজনের উপর করাটা কতটুকু যৌক্তিক সেটাও ভেবে দেখা উচিত। নিজের বেলায় হলে সব বৈধ, আর নিজের বিরুদ্ধে গেলে অবৈধ সেই ধারনাও ঠিক না। যদি সেই ধারনা মনে লালন করি, তাহলে বুঝতে হবে, আমরা আসলে সুযোগের অভাবে সৎ, প্রকৃত অর্থে নয়!
যা-ই হউক, একটা সহিষ্ণুতার উদাহরন দিয়ে শেষ করতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রের গেলবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের কথাটা আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে? তাবৎ বিশ্বের কোটিকোটি মানুষের ধারনা, রাজনৈতিক বোদ্ধাদের বিশ্লেষনকে মিথ্যা প্রমাণীত করে সম্ভাব্য বিজয়ী হিলারী ক্লিন্টনকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পপুলার ভোটে পরিস্কারভাবে এগিয়ে থেকেও ইলেক্টোরাল ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন হিলারী! সেই ইলেক্টোরাল ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। ডেমোক্রেটের পক্ষ থেকে সুক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগে সাময়িক তোলপাড় ছিল যুক্তরাষ্ট্র সহ গোটা বিশ্ব। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বলে কথা! ঘোলা জলকে আরো ঘোলা না করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থ এবং নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষার্থে হিলারী সেদিন অশ্রু সংবরণ করে, পরাজয় মেনে নিয়ে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন! কারণ, তাঁদের কাছে জয় পরাজয়ের চেয়ে দেশ বড়, দেশের স্বার্থ বড়। আমরাও কি পারিনা তাঁদের মত এমন সহিষ্ণুতার উদাহরন তৈরী করতে? চাইলে অবশ্যই পারি। প্রয়োজন কেবল, প্রিয় উখিয়ার উন্নয়নের কথা চিন্তা করা। পাঁচটি বছর কিন্তু খুব বেশি দীর্ঘ সময় নয়। তাঁর কাজের মূল্যায়ণ জনগন ঠিকই করবে। তবে এখন নয়, ঠিক পাঁচবছর পর। কারন, এখন সময় এগিয়ে যাবার, এগিয়ে নেবার।
তাই আসুন, নিজ এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে জনগনের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে সহযোগিতা করি।
তৃরত্নের পথচলা হয় যদি একসাথে,
উখিয়ার উন্নয়ন পারবেনা কেউ ঠেকাতে।
যোগ্যতা, দক্ষতা এবং সক্ষমতার সুনিপুন সমন্বয়ে গড়া উখিয়া উপজেলা পরিষদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেলের সফলতা কামনা করি।
[বিঃদ্রঃ আমার এই লেখাতে কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখীত। এটা আমার একান্তই নিজস্ব মতামত। ঘর পোড়া গরু সিঁধুরে মেঘ দেখলে যেমন ভয় পায়, ঠিক তেমনি আমাদেরও ভয় লাগে, অজানা অাশঙ্কায় সংকিত হয় এই কারনে যে, এসব মামলা হামলার কারনে গতবারের উপজেলা পরিষদ প্যানেলকে আমরা পূর্ণাঙ্গ সময়ের জন্য পাইনি। সেই পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মনোবেদনা আমরা বুঝি বলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাইনা। আমরা আমাদের প্রিয় উখিয়ার উন্নয়ন চাই। যে উন্নয়নের নেতৃত্বে থাকবেন ছবির এই তিন রত্ন। মনে রাখতে হবে, বৃহত্তর স্বার্থে নিজের পরাজয় মেনে নিয়ে অন্যকে ছাড় দেওয়াও এক ধরনের বিজয়।]
লেখকঃ বার্তা সম্পাদক, ডিবিডিনিউজ২৪ডটকম ও ব্যাংকার।
মন্তব্য করুন