রোমানা ইয়াছমিন পুতুল : সম্পূর্ণ নিজের চোখে দেখা ও জানা বিষয় গুলো নিয়ে ধারাবাহিক লিখার জন্য মন স্থির করেছি। আগেই বলে নিচ্ছি, আমার লিখায় কারো নাম মেনশন করা হবে না। কোন বিষয়টি নিয়ে আগে লিখব সেটাও বুঝতে পারছি না। আমার মনে হচ্ছে একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে লিখা শুরু করলে ভালো হবে।
আজকের বিষয় : গণপরিবহন ও চালক
সিএনজিতে কোর্টবাজার হতে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজার ৭০ টাকা আর লিংক রোড হয়ে গেলে ৭৫ টাকা।
গতবছর এই বিষয়ে উপজেলায় ইউএনও এর সাথে বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা হলো-
উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের সাথে সিএনজি সমিতির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলার সকল সিএনজিতে এই তালিকা ঝুলিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
যদি কোন সিএনজি চালক এই তালিকার বাইরে টাকা দাবি করে তাহলে নিচে দেওয়া নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্য অনুরুধ জানিয়েছেন উখিয়া উপজেলা অটো রিক্সা, সিএনজি ও টেম্পো পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মাসুদ আমিন শাকিল।
-অভিযোগ জানানোর নাম্বার – ০১৮৩৮৯৭৯২৩৮,,০১৮১৯৭০৫৫৪২
এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের ঠিক তিনদিন পর আমি কোর্টবাজার হতে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজার যাচ্ছিলাম একটি সিএনজি করে। যেহেতু উপজেলা প্রশাসন ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছেন তাই আমি চালকের সাথে ভাড়া নিয়ে কোন কথা বলি নাই। কক্সবাজার পৌঁছে যখন চালককে ৭০ টাকা রাখতে বললাম তখন তিনি বললেন ৮০ টাকা দিতে হবে। কিছুতেই মানতে চাচ্ছে না। তার এক কথা সে ৮০ টাকায় রাখবে। আমি নিরবে মোবাইল বের করে তাকে তালিকাটি দেখালাম এবং বললাম, আমি কি আপনার বিরুদ্ধে উল্লেখিত নাম্বারে অভিযোগ করব নাকি আপনি ঠিক ভাড়ায় নিবেন?
চালক : আমাদের এই ভাড়াতে পোষায় না। রাস্তা বেশি ভাঙ্গা, তেল গ্যাসের দাম বেশি ইত্যাদি ইত্যাদি সে আমাকে বলতে লাগল..
আমি : ধরে নিলাম আপনার অভিযোগ সব সত্যি এবং আপনার আরও বেশি ভাড়া নেওয়া উচিত। এখন আপনার কাছে আমার প্রশ্ন- উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে বৈঠকে উভয় পক্ষের সমঝোতাতে এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আপনাদের যদি না পোষায় তাহলে আপনারা কেন ইউএনও বা আপনাদের শ্রমিক নেতা বরাবর অভিযোগ করেন নি? কেন ভাড়ার তালিকা আপনার গাড়িতে টাঙানো হয়নি? আপনি যাত্রীকে কেন হয়রানি করবেন?
চালক বিড়বিড় করে অস্পষ্ট সুরে কিছু বলার পর বলল- ঠিক আছে ৭০ টাকায় দেন। আমার লস হলো আর কি…
আমরা জানি, নীতির বিরুদ্ধে কোন কাজ-ই হলো দুর্নীতি। চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নীতি বিরুদ্ধ কাজ করে ছোট ছোট দুর্নীতি করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
প্রথমে আপনাদেরকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রজ্ঞাপনের চুম্বক অংশ জানিয়ে দিই।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সর্বশেষ
৩ মে ২০১৬ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের প্রতি কিলোমিটারের সর্বোচ্চ ভাড়া হচ্ছে ১ টাকা ৪২ পয়সা।
কোর্টবাজার থেকে লিংকরোডের দূরত্ব ২১ কিলোমিটার। সে হিসেবে কক্সবাজার-টেকনাফ হাইওয়ে রোডের বাস ও মিনিবাসের ভাড়া হলো ৩০ টাকা। বেশ কয়েকবার বাসে (স্পেশাল সার্ভিস মিনিবাস) করে যাতায়াতের সময় তাদেরকে ৩০ টাকা রাখতে বললে,
হেল্পার : বড় গাড়ি তাই ভাড়া বেশি দিতে হবে। ৫০ টাকার কম হবে না। যখন তর্ক করি তখন চালকও তার হেল্পারের সাথে সুর মিলিয়ে বলে আরাম করে বড় গাড়িতে করে গেলে ভাড়াও বেশি দিতে হবে। পাশের সিটে বসা লোকজনও একই সুরে বলে আমিও দিয়েছি আপনিও দিয়ে দেন।
যখন কথা বলার মুড থাকে তখন কিন্তু আমি খুব বেশি তর্ক করি যুক্তিখন্ডন করি। তাদেরকে প্রতি কিলোমিটার ১.৪২ টাকা হিসেবে ভাড়া দিয়েছি ৩০ টাকা। কিন্তু যখন মুড ভালো থাকে না তখন নিরবে অতিরিক্ত ভাড়া আমি দিয়ে গেছি।
তর্ক করতে গিয়ে খুব তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে। উখিয়া থেকে হ্নীলা বাজারের দূরত্ব ৩১ কিলোমিটার। সে হিসেবে ভাড়া প্রায় ৪৫ টাকা। একবার মিনিবাসের (স্পেশাল সার্ভিস) এক হেল্পারকে তর্ক করে ৫০ টাকা ভাড়া দিয়েছি বলে টানা ১মাস সে তার গাড়িতে আমাকে তুলেনি। তার দাবি ৮০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।
সর্বশেষ আমি টেকনাফ গিয়েছি ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। শেষ যাত্রায় মিনিবাসে হেল্পার ও যাত্রীদের সাথে আমার কথোপকথন তুলে ধরলাম-
আমার যাত্রা উখিয়া স্টেশন থেকে টেকনাফ।
আমি : ভাড়া কত?
হেল্পার : ১২০ টাকা
আমি : আমি জানি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ ভাড়া হলো ১২০ টাকা। কোন যুক্তিতে আপনি ১২০ টাকা বললেন?
হেল্পার : তাহলে ১০০ টাকা দিন।
অথচ প্রতি কিলোমিটার ভাড়া হিসেব করলে সে আমার কাছ থেকে নিতে পারবে ৮০ টাকা।
তর্ক করার ইচ্ছে ছিলো না বিধায় ১০০ টাকায় দিয়ে দিলাম।
আধা ঘণ্টা পর আমার পাশের সিটের একজন যাত্রী থেকে ভাড়া নিল ৯০ টাকা।
আমি : ভাইয়া (যাত্রী) আপনি কোথা থেকে গাড়িতে ওঠেছেন?
যাত্রী : মরিচ্যা থেকে।
আমি তৎক্ষনাৎ হেল্পারকে ডাকলাম এবং ২০ টাকা ফেরত দিতে বললাম। হেল্পার ভাই আমাকে টাকা ফেরত দিবে না।
যাত্রী ভাই ত আমার উপর উল্টো ক্ষেপে গেলো। কেন আমি হেল্পার ভাইয়ের সাথে তর্ক করতেছি। কারণ, তার থেকে ১০ টাকা বেশি দেওয়া লাগতে পারে।
অনেক তর্কের পরও যখন সে আমাকে টাকা ফেরত দিবে না বলেছে। তখন আমি তাদের সবার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে গাড়িতে ঘোষণা করলাম-
আমাকে যদি টাকা ফৈরত না দেন তাহলে আপনাদের টেকনাফ বাসটার্মিনালে গাড়ি থামালে গাড়ির একটা কাঁচ ভেঙ্গে দিয়ে আমি আপনাদের এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো। দেখি কার সাহস আমাকে আটকায়।
আমার এই ঘোষণা শুনে কিছুক্ষণপর চালক হেল্পারকে বলল, আমাকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত আমিই জিতেছি।
আমার আরও তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে, আমার এই ন্যায় দাবির জন্য কোন গাড়ির চালক আমাকে তুলতে চাইতো না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ি পেতাম না।
চালক হেল্পারের চেয়েও আমার সবচেয়ে বড় ক্ষোভ জনগণের প্রতি। সবাই যদি ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে এইসব চালকের গাড়িতে না ওঠতো তাহলে তাদের উচিত শিক্ষা হতো। কিন্তু আমাদের অতি দরদের ভাই বোনেরা চালকদের অন্যায় দাবি মেনে নিয়ে গাড়িতে ওঠে। এভাবে আমরা দিনের শুরুটা করে থাকি অন্যায় আবদার মিটিয়ে।
আপনারা ভাড়ার তালিকা যাচাই করার জন্য সরকারি ওয়েবসাইট www.brta.gov.bd ভিজিট করতে পারেন।
মন্তব্য করুন