বাংলাদেশের সবচেয়ে জনবহুল উপজেলার মধ্যে উখিয়া অন্যতম। আড়াই লক্ষ স্থানীয় জনবসতির সাথে প্রায় দশ লক্ষর মত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস এখানে। রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি অন্যান্য অধিকার নিশ্চিত করতে দেশবিদেশর মিশ্রিত চামড়ার আরো ৭০ থেকে ৮০ হাজারের মত কর্মকর্তা কর্মচারীর সমাগম এই উখিয়ায়।
দেশে প্রায় দুইমাস ধরে লকডাউন চললে ও রোহিঙ্গাদের সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে এই এলাকায় লকডাউনের তেমন প্রভাব পড়তে খুক একটা দেখা যায়নি।সকালবেলা আগের মত রাস্তার মধ্যে রোহিঙ্গা সেবায় নিয়োজিত এনজিও গুলোর দামি দামি গাড়ির লাইন লক্ষ করা যায় প্রতিনিয়ত।
অবশ্যই থাকারই কথা। রোহিঙ্গাদের যদি নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত না করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারন করবে। খাবারের তাড়নায় তারা হাহাকার হয়ে স্থানীয় মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়বে। তাই রোহিঙ্গা সেবায় নিয়োজিত এনজিওগুলোর কার্যক্রমগুলো চলমান থাকুক সেটা দাতা সংস্থার মত আমরাও চাই।
কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। করোনার পরিস্থিতির প্রথমদিকে লকডাউন কিছুটা শরু হলে অন্যান্য জেলার কর্মকর্তা কর্মচারীরা ছুটি নিয়ে নিজ নিজ জেলায় চলে যায়। প্রথমদিকে শুধু ঢাকায় করোনা পাওয়া গেলেও এখন দেশের প্রায় জেলায় করোনা পাওয়া যাচ্ছে। লকডাউনও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এহেন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জেলার অবস্থানরত এনজিও কর্মকর্তা কর্মচারীরা এনজিও গুলোর চাপে চাকরি বাচাঁতে আবার উখিয়া ফেরা শুরু করেছে।যা রীতিমতো উদ্ধিগ্ন করে তুলেছে উখিয়ার মানুষকে।
উখিয়ার সচেতন মানুষগুলো প্রতিবাদ করেও ঠেকাতে পারছেনা এসব বহিরাগতদের। এনজিও কর্মীদের বেশিরভাগ স্থানীয় মানুষের ঘরবাড়ি ভাড়া নিয়ে এখানে থাকে। তারা যদি করোনার জীবানু নিয়ে উখিয়ায় আসে তাহলে খুব সহজে উখিয়া এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা ছড়িয়ে পড়বে। যা সত্যিই উখিয়ার মানুষের উদ্ধিগ্ন হওয়ার কথা।
উখিয়ার ইউএনও মহোদয় অনেক চেষ্টা করছে এসব এনজিও কর্মীরা উখিয়া আসলে হোমকুয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে। উনি হোমকুয়ারেন্টাইনের কথা বললে ও অনেকে তা মানছেন না। অনেক ক্ষেত্রে উনার একার পক্ষে প্রতিদিন প্রবেশ কারী এত সংখ্যক কর্মীদের খবরাখবর রাখাও সম্ভব হয়না।
এলাকার মানুষ যদি এনজিও কর্মীদের হোমকুয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে যায় সেক্ষেত্রে বড়ধরনের দুর্ঘটনাও সৃষ্টি হতে পারে।কারন এলাকার মানুষ এনজিও কর্মীদের অনুপ্রবেশ এমনিতেই খুব ভালভাবে নিচ্ছেন না। যা প্রতিদিনকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এলাকার মানুষের অনুভূতির প্রকাশে লক্ষ করা যায়।
উখিয়ায় যদি করোনার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে তাহলে এত জনবহুল উখিয়ায় মানুষের লাশ দাপনের মানুষ ও পাওয়া যাবেনা। লাশের স্তুপ পড়ে থাকবে পথে পথে। কারণ রোহিঙ্গারা করোনা মরোনা বিশ্বাস করেনা। তাদের সেবক আর রোহিঙ্গাদের অচেতনতাই আমাদের ও ধ্বংস ডেকে আনবে।
এহেন পরিস্থিতিতে এনজিওগুলোর প্রতি আহবান থাকবে আপনারা আপাতত স্থানীয় যে সব কর্মী আছে তাদের দিয়ে জরুরি কাজগুলো সম্পাদন করেন। তার পরে ও কর্মী সংকট হলে করোনা কালীন প্রজেক্ট করে স্থানীয় ছেলেদের নিয়োগ দিয়ে কাজ চালিয়ে যান। অন্যথায় বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশাসনের প্রতি আহবান থাকবে আপনারা এনজিওগুলোকে পেসার ক্রিয়েট করেন। যাতে তারা অন্তত এই সময়টা স্থানীয় কর্মীদের দিয়ে যেন কাজ করাই।বাহির জেলার কেউ যেন উখিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে।
মনে রাখতে হবে করোনা কিন্তু শ্রেনী বিন্যাস করে আক্রান্ত করেনা?ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে আপনি আমি কেউ নিরাপদ না।
তাই এখনই সময় এনজিওগুলোর লাগাম টেনে ধরার।
অযথা উখিয়ার মানুষকে আর আতংকিত করবেন না। আসুন আমরা সবাই সচেতন হই।নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে নিরাপদ রাখি।
ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন।
লেখক : প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, উখিয়া কলেজ, কক্সবাজার।
মন্তব্য করুন