শংকর বড়ুয়া রুমি : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের ‘প্রথম রেড জোন’ ঘোষণা করে কক্সবাজার পৌর এলাকায় দ্বিতীয়বারের অবরুদ্ধ (লকডাউন) করার কার্যক্রম চলছে।
তবে ফার্মেসি ও করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রমে নিয়োজিত যানবাহন ছাড়া যে কোন ধরণের পরিবহন, মার্কেট, দোকান ও বিপণী বিতান বন্ধ রাখার জন্য প্রশাসনের নির্দেশনা থাকলেও অনেকে তা মানছেন না। সীমিত আকারে শুরু হয়েছে যানবাহন ও যত্রতত্র মানুষের চলাচল।
এছাড়া ‘রেড জোনের’ আওতায় এ অবরুদ্ধ কার্যক্রম বাস্তবায়নে এখনো পুরোদমে মাঠে তৎপর হতে দেখা মিলেনি পুলিশসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের।
শনিবার রাতের প্রথম প্রহর ১২ টার পর থেকে পুরো কক্সবাজার পৌর এলাকায় শুরু হয়েছে এ লকডাউন।
লকডাউনের এ ঘোষণা আগামী ২০ জুন রাত ১২ টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
এর প্রেক্ষিতে শনিবার সকাল থেকে কক্সবাজার পৌর এলাকায় ঔষুধের দোকান ছাড়া কাঁচা বাজার, মার্কেট, দোকান ও বিপণী বিতানসহ সকল প্রকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সীমিত রয়েছে যানবাহন চলাচলও। চলাচল কমেছে মানুষের।
প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী, সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার মুদির দোকান ও কাঁচা বাজার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সেই সাথে সপ্তাহের এ ২ দিন খোলা থাকবে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া লকডাউনের এ সময়ে নিত্যপণ্য বহনকারি হালকা ও ভারী যানবাহন শুধুমাত্র রাত ৮ টা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত পৌর এলাকায় চলাচল করতে পারবে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও জরুরি সেবা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত আকারে খোলা রাখা যাবে।
এছাড়া এম্বুলেন্স, রোগী পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারি ব্যক্তিগত গাড়ী, কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও জরুরি সেবা প্রদানকারি কর্তৃপক্ষের গাড়ী লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান সমূহের গাড়ী চলাচলেও জন্য প্রশাসনের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।
এসবের পাশাপাশি গণপরিবহনের বাস টার্মিনাল পৌর এলাকার বাইরে সরিয়ে নেয়া এবং প্রকাশ্য স্থানে বা গণজমায়েত করে ত্রাণ, খাদ্য পন্য বা অন্যান্য পন্য বিতরণ না করতে প্রশাসনের বিধি-নিষেধ রয়েছে।
শুক্রবার বিকালে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এ সংক্রান্ত একটি জরুরী বিজ্ঞপ্তি জারি করেন এবং শনিবার রাতের প্রথম প্রহর ১২ টার থেকে ‘রেড জোন’ ঘোষনার মধ্য দিয়ে সমগ্র কক্সবাজার পৌর এলাকায় এ লকডাউন শুরু হয়েছে।
এর আগে গত ২৫ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত লকডাউন ছিল কক্সবাজারে। এরপর ৩১ মে থেকে লকডাউন উঠে গেলে সবধরণের যানবাহন চলাচল বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দোকানপাট, মার্কেট ও সবধরণের ব্যবসা প্রতিষ্টান খোলা রাখায় জনসমাগম বেড়ে যায়।
এর মধ্যে কক্সবাজার পৌর এলাকাসহ কক্সবাজার সদর উপজেলায় আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। এর প্রেক্ষিতে নতুন করে ১৫ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার পৌর এলাকায় দ্বিতীয় দফায় লকডাউন শুরুর প্রথমদিন শনিবার সকাল থেকে প্রশাসনের বিধি নিষেধ না মেনে শুরু হয়েছে প্রধান সড়কসহ শহরের অলিগলিতে বিভিন্ন ধরণের গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল। অধিকাংশ দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অল্প কিছুসংখ্যক খোলা রাখতে দেখা গেছে। রাস্তাঘাটে বসেছে কিছুসংখ্যক হকার। বন্ধ রয়েছে ব্যাংকসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
শহরে প্রধান সড়কের পাশাপাশি উপসড়কসহ অলিগলিতেও দেখা গেছে মানুষকে চলাচল করতে।
কিন্তু কক্সবাজার পৌর এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে লকডাউনের আওতায় প্রশাসনের বিধি-নিষেধ অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তেমনটা তৎপরতার দেখা মিলেনি পুলিশ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের।
তবে শহরের কয়েকটি স্থানে প্রশাসনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশের কিছুসংখ্যক সদস্যকে তৎপর দেখা গেছে। এতদসত্বেও পুরোপুরি লকডাউনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, করোনা আক্রান্তের দিক থেকে কক্সবাজার জেলা দেশে ৪ নম্বরে রয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ৮৭৭ জন আক্রান্তের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় রয়েছে ৩৬৪ জন। যাদের অধিকাংশই কক্সবাজার পৌর এলাকার বাসিন্দা। তাছাড়া জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। এদের মধ্যে ১৩ জনই হচ্ছে কক্সবাজার পৌর এলাকার বাসিন্দা।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজার পৌর এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে বলেন জেলা প্রশাসক।
কামাল বলেন, লকডাউনের নির্দেশনা মানা এবং লোকজনকে সচেতন করতে প্রশাসন নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। যে বা যারা নির্দেশনা অমান্য করবে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া নেবে।
উল্লেখ্য, গত ৬৩ দিনে মোট ৭৩৫১ জন সন্দেহভাজন রোগীর করোনা ভাইরাস টেষ্ট করা হয় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে স্থাপিত ল্যাবে। এর মধ্যে ৯৫৮ জনের রিপোর্ট করোনা পজেটিভ পাওয়া গেল। এতে কক্সবাজার জেলার রয়েছে ৮৭৭ জন। জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় রয়েছে ৩৬৫ জন শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২ শতাধিকের বেশী কক্সবাজার পৌর এলাকার বাসিন্দা।
এছাড়া মহেশখালীতে ৩৪ জন, টেকনাফে ৪১ জন, উখিয়ায় ১১০ জন, রামু ৫৩ জন, চকরিয়ায় ১৮৯ জন, কুতুবদিয়ায় ৩ জন এবং পেকুয়ায় ৪৭ জন রয়েছে। এর সাথে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৩৫ জন রোহিঙ্গা।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়া ৯৫৮ জনের মধ্যে অন্যান্যরা কক্সবাজার জেলার নিকটবর্তী বান্দরবান জেলাসহ চট্টগ্রামের চাঁদগাঁও, সীতাকুঞ্জ, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার বাসিন্দা।
মন্তব্য করুন