সুজন কান্তি পাল : আজ ভয়াল ৩০ সেপ্টেম্বর। ২০১২ সালের এই দিনে কোটবাজারস্থ পশ্চিমরত্না সুদর্শন বৌদ্ধ বিহারে সন্ধ্যা থেকে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি হামলায় দীর্ঘ ৩ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর আমার দ্বিতীয় জীবনে ফিরে আসার সেই দিন। ২৯ সেপ্টেম্বর রামু বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার পর সারাটা দিন উখিয়া উপজেলায় সেদিন বিরাজ করছিলো থমথমে পরিস্থিতি। উখিয়ায় খুব ভোরে প্রথম একটি মিছিল আসে রামু চেকপোস্ট হয়ে মরিচ্যা গরুবাজার সেতুনীর টেক পর্যন্ত। সেই মিছিল থেকে সন্ত্রাসীরা সেখানে অবস্থিত বৌদ্ধ বিহারের নামফলকটি প্রথমে ভাংচুর করে। খুব ভোরে তৎসময়ে ডিজিএফআইয়ের এক কর্মকর্তার ফোনে আমার ঘুম ভাঙে।তারপর থেকে সারাটাদিন সময় কাটে হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মিন্টুর সাথে।সাথে ছিলেন যুবলীগ নেতা সাজু। হলদিয়ার প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারের আশ-পাশের মানুষের সাথে কথা বলে তাদেরকে অভয় দেয়ার চেষ্টা করছিলেন তৎকালীন চেয়ারম্যান।অন্যদিকে রুমখাঁ মনির মার্কেটের দিকে অবস্থান নিয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী তাঁর আশ-পাশের বৌদ্ধ বিহার ও পল্লীর মানুষ গুলোকে অভয় বার্তা শুনাচ্ছিলেন। দুপুরের দিকে কোটবাজারে একটি সম্প্রীতি মিছিল ও দক্ষিণ স্টেশনে পথসভাও হয়েছিলো। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরীর সাথে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীও।পরে দিন ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামে।সেই সময় পর্যন্ত পশ্চিম রত্না সুদর্শন বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানে ছিলেন মাহমুদুল হক চৌধুরী। কামাল উদ্দিন মিন্টুসহ আমরা সন্ধ্যায় বিহারে অবস্থানরত চৌধুরীর সাথে কথা বলার জন্য যাই।কিছুক্ষণ কথা বলার পর চেয়ারম্যান মিন্টু তার গাড়ীটি ড্রাইভ করে চলে যান অন্যদিকে। কথা বলতে বলতে আমি এবং সাজু থেকে যাই চৌধুরীর সাথে বিহারেই। আগে থেকেই সেখানে ছিলেন চৌধুরী পাড়ার স্থানীয় দু’যুবক সিরাজ-সালমান (প্রয়াত)। হঠাৎ বৃষ্টির মত এলোপাতাড়ি পাথর বর্ষণ। আমরা চেষ্টা করছিলাম সেখানে থাকা চেয়ার হাতে নিয়ে নিজেকে রক্ষা করার জন্য। জনাব, চৌধুরী তার হাতে থাকা বন্দুক দিয়ে ফাকা গুলিবর্ষণ করতে থাকেন হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার জন্য।অন্যদিকে চৌধুরী পাড়ার দু’যুবক বার বার চেষ্টা করছিনেন মাহমুদুল হক চৌধুরীকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু জনাব, চৌধুরী সেটা না করে তাঁর অবস্থানেই অটল থেকে হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন এবং ৩ঘণ্টা পাথর বৃষ্টিতে রক্তাক্ত হয়েছিলেন। আমাদের হাতে থাকা বর্ম হিসেবে যে চেয়ার গুলো ছিলো সে গুলো পাথরের আঘাতে ভেঙে যাওয়ায় এবং অামরাও কিছুটা আঘাত প্রাপ্ত হওয়ায় জনাব, চৌধুরী আমাদের মন্দিরের পেছনে অবস্থান নিতে বলেন। প্রায় ৩ ঘণ্টা আমরা এভাবেই অবরুদ্ধ ছিলাম সেখানে।সেদিনকার স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকার কথা আর নাইবা বললাম। কক্সবাজার থেকে তৎসময়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ, RAB ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়ার পর আমরা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হই। ততক্ষণে আগুণের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছার-খাড় হয়ে যায় হলদিয়াসহ উখিয়ার অধিকাংশ বৌদ্ধ বিহার গুলো।
মন্তব্য করুন